ব্লগিং করি ৩ বছর ধরে কিন্তু কেন আয় হচ্ছে না?

ব্লগিং আজকের দিনে এক জনপ্রিয় পেশা হয়ে উঠেছে। অনেকেই ভাবেন যে ব্লগ শুরু করলে খুব শীঘ্রই অর্থ আয় শুরু হবে। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। আপনি হয়তো ব্লগিং করছেন অনেকদিন ধরে, হয়তো ৩ বছরও হয়ে গেছে, কিন্তু এখনও তেমন কোনো আয় হচ্ছে না। এই পরিস্থিতি অনেকেই সম্মুখীন হন, এবং এর কারণগুলো খুব সাধারণ হতে পারে। আসুন দেখি, কেন আপনি আয় করতে পারছেন না এবং কীভাবে এই সমস্যাগুলোর সমাধান করা যেতে পারে।

ব্লগিং করি ৩ বছর ধরে কিন্তু কেন আয় হচ্ছে না? | Why is my blog not making money in Bengali?

১. সঠিক Niche নির্বাচন না করা | Choosing the Wrong Niche

Niche নির্বাচন ব্লগিংয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি এমন একটি Niche বেছে নেন যা খুব বেশি প্রতিযোগিতাপূর্ণ বা খুব কম জনপ্রিয়, তাহলে ট্রাফিক পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। ধরুন, আপনি এমন একটি বিষয় নিয়ে লিখছেন যা হয়তো আপনার নিজের পছন্দের, কিন্তু সেই বিষয়টির পাঠক সংখ্যা খুবই কম। আবার যদি এমন একটি Niche বেছে নেন যেখানে বড় বড় ব্লগাররা আগে থেকেই ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত, তাহলে নতুনদের জন্য জায়গা তৈরি করা কঠিন।

উদাহরণ: আপনি যদি ‘travel’ নিয়ে ব্লগ শুরু করেন, যেখানে অনেক বড় বড় ব্লগার রয়েছে, তাহলে নতুন ট্রাফিক পেতে এবং আয় করতে বেশ কষ্ট হতে পারে। এর পরিবর্তে, আপনি ‘budget travel for students’ বা ‘offbeat destinations in India’ মতো Niche বেছে নিতে পারেন, যেগুলোতে কম প্রতিযোগিতা এবং ভালো পাঠক আকর্ষণ করার সম্ভাবনা বেশি।

কীভাবে সমাধান করবেন: Niche নির্বাচন করার সময় ভালোভাবে রিসার্চ করুন এবং এমন Niche বেছে নিন যেখানে কম প্রতিযোগিতা রয়েছে কিন্তু পাঠকদের আগ্রহ বেশি। Google Trends, SEMrush-এর মতো টুল ব্যবহার করে Niche-এর জনপ্রিয়তা যাচাই করুন এবং এমন বিষয় বেছে নিন যা আপনি Passionately লিখতে পারবেন।

২. SEO না জানা বা না প্রয়োগ করা | Lack of SEO Knowledge or Application

SEO (Search Engine Optimization) ব্লগিংয়ের মেরুদণ্ড। যদি আপনি সঠিকভাবে SEO না করেন, তাহলে আপনার ব্লগ সার্চ ইঞ্জিনে ভাল স্থান পাবে না, এবং আপনার কন্টেন্ট কেউ খুঁজে পাবে না। অনেক সময় ব্লগাররা ভাবেন, ভালো কন্টেন্টই যথেষ্ট, কিন্তু সেটিকে সঠিকভাবে Optimize না করলে সেই কন্টেন্টের মূল্য কমে যায়।

উপায়: Google Search Console, Google Analytics এবং SEMrush-এর মতো টুল ব্যবহার করে সঠিক কিওয়ার্ড (keywords) খুঁজে বের করুন। আপনার ব্লগ পোস্টের হেডিং, সাবহেডিং, ইমেজ অ্যালট টেক্সট এবং URL-এ সঠিক কিওয়ার্ড ব্যবহার করুন।

কীভাবে সমাধান করবেন: SEO শিখুন এবং তা প্রতিটি পোস্টে প্রয়োগ করুন। আপনার কন্টেন্টের জন্য সঠিক কিওয়ার্ড রিসার্চ করুন এবং কন্টেন্টটি SEO বান্ধব করার জন্য হেডিং, মেটা ট্যাগ, এবং ইমেজ Alt Text-এ কিওয়ার্ড ব্যবহার করুন। এছাড়া, আপনার ব্লগের লোডিং স্পিড এবং মোবাইল ফ্রেন্ডলিনেস ঠিক আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।

৩. কন্টেন্ট নিয়মিত আপডেট না করা | Irregular Content Updates

আপনি হয়তো শুরুতে অনেক কন্টেন্ট লিখেছেন, কিন্তু তারপর ধীরে ধীরে লেখার গতি কমে গেছে। অথবা একবার কন্টেন্ট পোস্ট করার পর সেটি আর আপডেট করেননি। এই ধরনের সমস্যা অনেক ব্লগারের ক্ষেত্রে দেখা যায়। নিয়মিত কন্টেন্ট প্রকাশ না করলে পাঠকেরা আপনার ব্লগে আসতে আগ্রহ হারায়, এবং সার্চ ইঞ্জিনেও আপনার ব্লগের প্রাধান্য কমে যায়।

উদাহরণ: ধরুন, আপনি একটি টেক ব্লগ লিখছেন। ২০২১ সালে আপনি একটি স্মার্টফোন রিভিউ লিখেছেন, কিন্তু সেই রিভিউ এখনও ২০২৪ সালে একই রকম আছে। এর মধ্যে নতুন ফোন এসেছে, পুরনো ফোনের আপডেট হয়েছে। সেই কন্টেন্ট আপডেট না করলে আপনার পাঠক আপনার ব্লগে ফিরে আসবে না, কারণ তথ্য পুরনো হয়ে গেছে।

কীভাবে সমাধান করবেন: প্রতিটি কন্টেন্টের জন্য একটি আপডেট ক্যালেন্ডার তৈরি করুন। পুরনো কন্টেন্টগুলিকে নিয়মিতভাবে রিভিউ করুন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো আপডেট করুন। যদি আপনি কোনো নতুন তথ্য বা পরিসংখ্যান পেয়ে থাকেন, তাহলে সেগুলো পুরনো পোস্টে যোগ করুন। নতুন কন্টেন্ট নিয়মিতভাবে পোস্ট করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

৪. Audience না বোঝা | Not Understanding the Audience

ব্লগিংয়ে সফল হতে হলে আপনাকে আপনার পাঠককে বুঝতে হবে। আপনার কন্টেন্ট যদি আপনার Audience-এর চাহিদার সঙ্গে মেলে না, তাহলে তারা আপনার ব্লগে আসবেন না বা নিয়মিত আসবেন না। Audience কে বোঝা মানে তাদের সমস্যাগুলো কী, তারা কী জানতে চায়, কীভাবে তারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে ইত্যাদি।

উপায়: Audience research করার জন্য আপনি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ, ফোরাম, এবং কিওয়ার্ড রিসার্চ টুল ব্যবহার করতে পারেন। এর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন কোন বিষয়গুলোতে আপনার Audience আগ্রহী।

কীভাবে সমাধান করবেন: Audience-এর চাহিদা এবং আগ্রহ বোঝার জন্য তাদের সঙ্গে ইন্টার‌্যাক্ট করুন। আপনি ফিডব্যাক সংগ্রহ করতে পারেন, সোশ্যাল মিডিয়া বা ব্লগের কমেন্ট সেকশনে তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন। Audience-এর সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেই অনুযায়ী কন্টেন্ট তৈরি করুন।

৫. মনিটাইজেশনের সঠিক কৌশল না জানা | Not Using Proper Monetization Techniques

কেবলমাত্র AdSense ব্যবহার করলেই আয় হবে, এই ধারণাটি ভুল। আপনার ব্লগ মনিটাইজ করতে বিভিন্ন উপায় রয়েছে। আপনি Affiliate Marketing করতে পারেন, Sponsored Posts নিতে পারেন, E-books বিক্রি করতে পারেন, বা কোর্স তৈরি করতে পারেন।

উদাহরণ: ধরুন, আপনার একটি ফুড ব্লগ রয়েছে। শুধুমাত্র AdSense থেকে আয় করার চেষ্টা করছেন, যা খুব কম আয় দিচ্ছে। এর পরিবর্তে, আপনি ফুড প্রোডাক্টসের Affiliate Marketing করতে পারেন বা আপনার নিজস্ব কুকবুক বিক্রি করতে পারেন। এছাড়াও, স্পন্সরড রেসিপি পোস্ট বা রেস্তোরাঁর রিভিউ থেকেও আপনি আয় করতে পারেন।

কীভাবে সমাধান করবেন: একাধিক মনিটাইজেশন পদ্ধতি ব্যবহার করুন। AdSense ছাড়াও Affiliate Marketing, Sponsored Posts এবং আপনার নিজস্ব পণ্য বা পরিষেবা বিক্রির সুযোগ খুঁজুন। পাঠকদের সমস্যার সমাধান করতে পারে এমন পণ্য বা পরিষেবা প্রোমোট করুন যাতে আপনার আয় বাড়ে।

৬. Consistency এর অভাব | Lack of Consistency

সফল ব্লগাররা সবসময় নিয়মিত ব্লগ পোস্ট করে থাকেন। Consistency না থাকলে Audience তৈরি হয় না। যদি আপনি এক মাসে একবার পোস্ট করেন, আবার পরের মাসে তিনবার, এটি একটি খারাপ অভ্যাস।

উপায়: একটি কন্টেন্ট ক্যালেন্ডার তৈরি করুন এবং তা অনুযায়ী নিয়মিত কন্টেন্ট পোস্ট করুন। ধরুন, আপনি প্রতি সপ্তাহে একটি নতুন ব্লগ পোস্ট করবেন ঠিক করলেন, তবে সেটা নিয়মিত করুন।

কীভাবে সমাধান করবেন: কন্টেন্ট ক্যালেন্ডার তৈরি করে তা অনুসরণ করুন। প্রতিটি সপ্তাহ বা মাসের জন্য নির্দিষ্ট ব্লগ পোস্টের পরিকল্পনা করুন এবং নির্দিষ্ট সময়ে সেগুলি পোস্ট করুন। Consistency বজায় রাখলে Audience আপনার ব্লগের প্রতি আগ্রহী হবে এবং নিয়মিতভাবে ফিরে আসবে।

৭. Promotion না করা | Lack of Promotion

অনেক ব্লগার ভাবেন, কেবল ব্লগ লিখলেই হবে, কিন্তু কন্টেন্টকে Promote করাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার না করলে বা ইমেল মার্কেটিং ব্যবহার না করলে আপনার কন্টেন্ট অনেকের কাছে পৌঁছাবে না।

উপায়: Facebook, Twitter, এবং Instagram-এর মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আপনার ব্লগের লিঙ্ক শেয়ার করুন। ইমেল সাবস্ক্রিপশন তৈরি করুন এবং নিয়মিতভাবে আপনার পাঠকদের নতুন কন্টেন্ট সম্পর্কে জানান।

কীভাবে সমাধান করবেন: সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে কন্টেন্ট প্রোমোট করা শুরু করুন। আপনি ফেসবুক গ্রুপ, লিঙ্কডইন পোস্ট এবং ইনস্টাগ্রাম স্টোরিজের মাধ্যমে কন্টেন্ট শেয়ার করতে পারেন। ইমেল মার্কেটিং ব্যবহার করে নিয়মিত পাঠকদের আপডেট দিন এবং নতুন কন্টেন্ট সম্পর্কে জানিয়ে দিন।

৮. ধৈর্য না রাখা | Lack of Patience

ব্লগিং থেকে আয় করতে সময় লাগে। প্রথমেই প্রচুর আয় হবে, এমনটা ভাবা ভুল। সফল ব্লগাররা বছরের পর বছর পরিশ্রম করেন, তারপর আয় আসে।

উদাহরণ: ধরুন, একজন ব্লগার ৬ মাস ধরে ব্লগ লিখছেন কিন্তু তেমন ফল পাচ্ছেন না। ধৈর্য ধরে ব্লগিং চালিয়ে গেলে, নিয়মিত আপডেট করলে, SEO প্রয়োগ করলে এবং Audience-কে বোঝার চেষ্টা করলে ফল আসতে শুরু করবে।

কীভাবে সমাধান করবেন: ধৈর্য ধরে ব্লগিং চালিয়ে যান। নিয়মিত কন্টেন্ট আপডেট করুন, SEO শিখুন এবং Audience-এর প্রয়োজন বুঝে কন্টেন্ট তৈরি করুন। সময়ের সঙ্গে আয় আসবে, কিন্তু তাৎক্ষণিক ফলের জন্য অপেক্ষা না করে কঠোর পরিশ্রম করে যান।

শেষ কথা | Final Thoughts

ব্লগিং থেকে আয় করতে হলে সঠিক কৌশল প্রয়োগ, Audience বোঝা, এবং নিয়মিত কাজ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতি, যেখানে ধৈর্য ধরে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। আপনি যদি এগুলো প্রয়োগ করতে পারেন, তবে অবশ্যই আপনার আয় বাড়বে। ব্লগিং শুধু আয় করার জন্য নয়, এটি একটি প্যাশন এবং এর মাধ্যমে মানুষের উপকার করতে পারা যায়। সঠিক কৌশল এবং ধৈর্যের মাধ্যমে আপনি সফল হবেন।

Leave a Comment